ঢাকা , রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫ , ২২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলাবদ্ধতা, ধুলাদূষণ, যানজট ও ডেঙ্গু ছিলো নিত্যদিনের সঙ্গী

রাজধানীজুড়ে ছিলো সীমাহীন ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ৩১-১২-২০২৪ ১২:১২:২৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ৩১-১২-২০২৪ ১২:১৩:৪৭ অপরাহ্ন
রাজধানীজুড়ে ছিলো সীমাহীন ভোগান্তি সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র আত্মগোপনে চলে যায়। তাদের পাশাপাশি দুই সিটির কাউন্সিলররাও আত্মগোপনে রয়েছেন। এরমধ্যে সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পালিয়ে দেশের বাহিরে অবস্থান করলেও কারাগারে রয়েছেন আতিকুল ইসলাম। যদিও মেয়র ও কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করে গত ১৯ আগস্ট দুই সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। আর ওয়ার্ডাগুলোতে সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর থেকে দুই সিটির সাবেক মেয়রদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসছে। বিশেষ করে দুই মেয়র দায়িত্বরত অবস্থায় বর্ষায় জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে ধুলার দুর্ভোগ, যানজট ও ডেঙ্গু থেকে মুক্তি দিতে পারেনি নগরবাসীকে। বছরজুড়ে এসব ভোগান্তি ছিল ঢাকাবাসীর সঙ্গী। এ বিষয়ে নানা মহলে এখনও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সরকার পতনের পর দুই সিটির উন্নয়নকাজ নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন দপ্তর থেকে সুবিধা নিতে অসাধু চক্র তৎপর রয়েছে। এ নিয়ে দুই সিটির নগর ভবনে নানা অস্থিরতা বিরাজ করছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ গত রোববার ওয়ার্ড পর্যায়ের গৃহস্থালির বর্জ্য অপসারণের ঠিকাদারি কাজ না পাওয়ার ক্ষোভে কয়েকজন ঠিকাদার গুলশান-২ ডিএনসিসি নগর ভবনে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলমকে হেনস্তা করেন। এ সময় তারা নিজেদের বিএনপির রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে দাবি করেন। সিইওর রুমে প্রবেশ করে গালাগাল করেন। একইসঙ্গে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে দক্ষিণ সিটির কয়েকজন কর্মকর্তাকে একইভাবে হেনস্তা করা হয়। ফলে দুই সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতা কাটছে না। এদিকে, দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান স্বপদে ফিরিয়েছেন ওই চক্রটির মাধ্যেমে। তার বিরুদ্ধে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প, সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম, করপোরেশনে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

ক্ষমতার রদবদলের পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। পরবর্তীতে নানা অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে দক্ষিণ সিটি। এছাড়া, প্রায় দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে নানা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ দিচ্ছেন মহড়া। সম্প্রতি দক্ষিণ সিটির একটি উন্নয়নের দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে একজন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। আর লাঞ্ছিত করা হয়েছে ৭ জন কর্মকর্তাকে। এছাড়া, এক কর্মকর্তাকে সবার সামনে মারধর করা হয়। এর ফলে দাপ্তরিক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আর গত রোববার কিছু লোক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলমকে হেনস্তা করা হয়। তারা সিইওর রুমে প্রবেশ করে তাকে হেনস্তার নেতৃত্ব দেওয়াদের একজন নিজেকে গুলশান থানা যুবদলের আহ্বায়ক দাবি করেন।

আরেকজনও নিজেকে বিএনপির নেতা ও সাবেক এক কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠজন দাবি করেন। সিইও তাদের বসতে বললেও তারা না বসে গালাগাল করতে থাকেন। একজন বলেন, ‘চিনিস না উনি আমাদের নেতা ও গুলশান থানা যুবদলের আহ্বায়ক। এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতা ও কর্মী উপস্থিত ছিলেন। নগর ভবনের নিচেও অর্ধশত নেতাকর্মীকে দাঁড়িয়ে ছিল।  একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিএনপি নেতা ও সাবেক এক কাউন্সিলরের নাম ব্যবহার করে নগর ভবনের প্রতিটি দপ্তরে কর্মকর্তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ডিএনসিসি নগর ভবনের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক হেদায়েতুল ইসলাম জানান, সিইওকে কিছু লোক এসে গালাগাল করেছেন বলে শুনেছি। তাদের অভিযোগ-আওয়ামী লীগের লোকদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। তবে এটা সঠিক নয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বুঝিয়ে ও অনুরোধ করে সেখান থেকে বের করে দিয়েছেন। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খায়রুল আলম বলেন, রোববার কয়েকজন ঠিকাদার প্রটোকল ভেঙে আমার রুমে প্রবেশ করেন। কোনো কিছু জানতে না চেয়ে তারা বাজে আচরণ করেন। একটি সরকারি দপ্তরে এমন ব্যবহার অপ্রত্যাশিত। তারা কিছু কাজ পেতে চাচ্ছেন-কিন্তু আইন অনুযায়ী যেটা হওয়ার আমরা সেটা করেছি। এতে তারা ক্ষুব্ধ। তারা নিজেদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী পরিচয় দিয়েছেন। এমন ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ বিষয়ে সর্বত্রই নানা আলোচনা সমালোচনা বিরাজমান রয়েছে।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢদুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রশাসক বসানো হয়। পরে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিতে সবমিলিয়ে ১৭২ জন কাউন্সিলর ছিলেন। সেখানে বর্তমানে দুই সিটির পরিচালনার জন্য দুই কমিটির ৫০ জন, আঞ্চলিক কর্মকর্তা ২০ জনসহ ৭০ জন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডগুলোতে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্ট সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ উঠেছে, বাড়তি দায়িত্ব ও লোকবলের সংকটের কারণে সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসীরা। বিশেষ করে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সনদ নিতে এসে বেগ পেতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। এ ছাড়া নিয়মিত মশক নিধন ও বর্জ্য অপসারণসহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে মেয়র-কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে।

এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে নানা ক্ষোভে সৃষ্টি হয়েছে। তবে বছরজুড়ে মশার অত্যাচার যেমন ভুগিয়েছে নগরবাসীকে, তেমনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে রেখেছে সীমাহীন চাপে। বছরজুড়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েও আটকানো যায়নি মশাকে। বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, একই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। এছাড়া, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি কর্পোরেশন প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি জলাবদ্ধতা নিরসনে সরাসরি ৯০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখে। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের (খাল, জলাশয় ও নর্দমা পরিষ্কার) জন্য ৩০ কোটি টাকা, খাল-পুকুর ও জলাশয় পুনরুদ্ধারে আরও দুই কোটি টাকা এবং পানির পাম্প ক্রয় ও স্থাপনে আরও এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সেই টাকা খরচ করার পরও এ বছর জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেয়। তাছাড়া, বছরজুড়ে, ধুলা দূষণ ও  তীব্র যানজটের কবলে ছিল নগরবাসী।  প্রায় এক হাজার ৪৬৩ দশমিক ৬০ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহর। এখানে বাস করেন নানা শ্রেণি-পেশার প্রায় দুই কোটি মানুষ। প্রতিদিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বসবাসরতদের নাগরিকসেবা নিশ্চিতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখাখার কথা ছিল দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু আশানুরূপ ভূমিকা না থাকায় বছরজুইে নানা ভোগান্তিতে ছিল নগরবাসী।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ